আজ বিশ্ব পাই দিবস।
আজকের তারিখকে যদি আমেরিকান স্টাইলে লেখা যায় তাহলে দাঁড়ায় ৩.১৪ যা কিনা পাই এর আপাত মান।
সেখান থেকেই আজকের দিনকে পাই দিবস করা হয়েছে।
পাই আসলেই অনেক সুন্দর সংখ্যা। যারা পাই নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছে তারা জানেন যে গণিতের যত ভিতরে যাওয়া যায় পাই এর সৌন্দর্যে ততই অবাক হতে হয়।
আমাদের দেশে সাম্প্রতিক সময়ে পাই নিয়ে খুব ঘাঁটাঘাঁটি করেছেন এমন একজন ব্যক্তি হলেন ডাক্তার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়।
উনি পাই এর মান বের করার এক মজার কনসেপ্ট বের করেছেন। তার নাম অনুসারে এই পদ্ধতিকে বলা হয় "সৌমিত্রের স্বাক্ষর"।
উনি যেটা করতেন সেটা হোল বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে গিয়ে উনি ছাত্রছাত্রীদের হাতে একটা করে সাদা কাগজ ধরিয়ে দিতেন। তারপর বলতেন এর কাগজের যে কোন যায়গায় যে কোনোভাবে সব ছাত্রছাত্রীকে নাম লিখে স্বাক্ষর করতে। ছাত্রছাত্রীরা নাম লিখে লিখে কাগজ ভর্তি করে ফেলতো। তখন উনি কাগজটি নিয়ে তাতে বড় করে একটা বর্গ আঁকতেন আর বর্গের ভিতরে বর্গের শবগুলো বাহু স্পর্শ করিয়ে যে বৃত্তটি আকা যায় সেটা আঁকতেন। তারপর কয়টি স্বাক্ষর বৃত্তের ভেতরে পরেছে আর কয়টি স্বাক্ষর পুরো বর্গটির ভেতরে পরেছে এই সংখ্যা থেকে উনি পাই এর বেশ কাছাকাছি একটা মান বের করে সবাইকে অবাক করে দিতেন।
মেথডোলজি খুবই সহজ। বৃত্তের ক্ষেত্রফল দিয়ে বর্গের ক্ষেত্রফলকে ভাগ করলেই পাই এর চার গুন মান পাওয়া যায়। কিন্তু ব্যাপারটির উপস্থাপন খুব মজার।
পাই নিয়ে মজার ঐতিহাসিক ঘটনার অভাব নেই। তার ভেতরে সবথেকে মজার ঘটনাটি সম্ভবত "Indiana Pi Bill". যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানা অঙ্গরাজ্যের ১৮৯৭ সালের 246 নাম্বার বিলটিকে বলা হয় Indiana Pi Bill.
আমরা জানি যে অ্যামেরিকা পুরা দুনিয়ার উল্টা চলে। সারা দুনিয়া ম্যাট্রিক সিস্টেমে ইউনিট ইউজ করে আর অ্যামেরিকা SI সিস্টেম। পুরা দুনিয়ার দিন তারিখ লেখার ফরম্যাট এক রকম তাদেরটা অন্য রকম। বড়ই ঘাড়ত্যারা জাতি। তো ইন্ডিয়ানার জেনারেল এসেব্লিতে ১৮৯৭ সালে এই বিল তুলে বলা হোল সারা দুনিয়া পাই এর মান বের করেছে বৃত্ত দিয়ে। তো তারা করলে কি আমাদেরও তাই করতে হবে? আমরা পাই এর মান বের করবো চতুর্ভুজ দিয়ে
তারা বের করলও। তাদের সেই উদ্ভট পদ্ধতি দিয়ে পাই এর মান আসলো ৩.২। বিলে বলা হোল এখন থেকে ইন্ডিয়ানা রাজ্যে পাই এর মান হবে ৩.২। আর এই রাজ্যের বাইরে যদি কেউ পাই এর এই মান ব্যাবহার করতে চায় তাহলে ইন্ডিয়ানা রাজ্যকে রয়েল্টি দিয়ে তারপর ব্যাবহার করতে হবে। কারন পদ্ধিতিটি আমরা আবিস্কার করেছি।
পুরাই শশুর বাড়ির আবদার।
যাই হোক, কিছু বিজ্ঞ ম্যাথমেটিসিয়ানদের হস্তক্ষেপে সেইদিন পুরা দুনিয়া এই গণিতের ইতিহাসের অন্যতম ন্যাক্কারজনক ঘটনা থেকে মুক্তি পেয়েছে।
পাই নিয়ে আগেও মানুষের আগ্রহের কমতি ছিলোনা, এখনও নেই, ভবিষ্যতেও থাকবে না।
সবার জীবন পাই এর মতো সুন্দর হোক।
শুভ বিশ্ব পাই দিবস।